‘দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে আনন্দ লাগছে। অনেক সহপাঠীর সঙ্গে বহুদিন পর দেখা হলো। এক নতুন বাংলাদেশে ভয়-ভীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরেছি। ক্যাম্পাসে এই স্বস্তি বজায় থাকুক।’ কথাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী মো. ফাহিমের। দীর্ঘ ১১২ দিন পর আজ রোববার আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে শ্রেণিকক্ষে ফিরে প্রথম আলোর কাছে এমন প্রতিক্রিয়া জানান ফাহিম। ঈদুল আজহার আগে গত ২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শুরু হয়। ছুটি শেষে ১ জুলাই শ্রেণি কার্যক্রম তথা ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সর্বজনীন পেনশনের নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবিতে সেদিন থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পৃথক আন্দোলনে গত জুলাইয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর আজ আবার ক্লাসে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ক্লাসে ফিরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল থেকে প্রথম বর্ষ ছাড়া স্নাতকের অন্যান্য বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের ক্লাস শুরু হয়। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানসহ পদস্থ শিক্ষকেরা আজ সকাল থেকে কয়েকটি অনুষদ ঘুরে শ্রেণি কার্যক্রমের চিত্র দেখেছেন। পাঁচটি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটে আজ ক্লাস হচ্ছে। আজ সকালে বিজ্ঞান, ফার্মেসি, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এলাকা ঘুরে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। অধিকাংশ বিভাগেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কার্জন হল ও ভিসি চত্বর এলাকায় দীর্ঘদিন পর দেখা গেছে লাল বাসের সারি। বটতলায় আড্ডা দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের অনেককে। কেউ কেউ শ্যাডোর খাবারের দোকানে নাশতা করছিলেন। মধুর ক্যানটিনেও ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্লাস শুরুর দিনে আজ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই ভালো। গড়ে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেছেন। কোনো কোনো বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রমে শতভাগ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের ঘটনা আছে—এমন কয়েকটি বিভাগে অবশ্য আজ ক্লাস হচ্ছে না। প্রক্টর জানালেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চারটি বিভাগ ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের একটি বিভাগে ক্লাস হচ্ছে না। তবে সেখানে কোনো হইচই নেই। পরিবেশ শান্ত আছে। অন্য সব বিভাগেই ক্লাস হচ্ছে।